রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

নীলফামারীর কুমলাই নদী উদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন

নীলফামারী সংবাদদাতা: নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত কুমলাই নদী থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, নদীর জমি নদীর নামে অন্তর্ভুক্ত করা ও এর প্রবাহ সচল করার জন্য ১০ দফা দাবিতে এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে নীলফামারী প্রেসক্লাব হলরুমে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডঃ তুহিন ওয়াদুদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২০২৩ সালে বাংলাদেশের নদ-নদীঃ সংজ্ঞা ও সংখ্যা শীর্ষক একটি বই প্রকাশ করেছে। এই বইয়ে নীলফামারীতে ২৭টি নদীর কথা বলেছে। আমরা সরেজমিনে এ জেলায় ৩৪টি নদীর সন্ধান পেয়েছি। রংপুর বিভাগে যে নদীগুলো আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সংকটে থাকা নদীগুলোর একটি কুমলাই নদী। নদীটির উপর ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে। কেবল তাই নয় নদীটিকে খুন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘদিনে নদীটির চরম সর্বনাশ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে দেশের উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করে রায় দিয়েছে। জীবন্ত সত্তা কুমলাই নদী হত্যা করাকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। নদ-নদী নিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয়। বাস্তবে কুমলাই নদী তিস্তার আন্তশাখা নদী। নদীটি ডিমলা উপজেলার ছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরচর নামক স্থানে তিস্তা থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা এবং টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী নামক মৌজায় তিস্তা নদীতে আবার মিলিত হয়েছে। বর্তমানে নদীখেকোদের কারণে নদীটি মরণাপন্ন। নদীটির স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র, সরকারি মহিলা মার্কেট, সেতুবিহীন একাধিক পাকা-কাঁচা সড়ক, অনেক বাড়ি, অনেকগুলো দোকান, পুকুর এবং আবাদি জমি বানিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, যাদের এই নদী দেখভাল করার কথা ছিল তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় নদীটির চরম ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। প্রথমত পানি উন্নয়ন বোর্ড ক্ষতি করেছে। দ্বিতীয়ত স্থানীয় প্রশাসন নদীর জমি ব্যক্তির নামে লিখে দিয়ে খাজনা নিয়েছে এবং খারিজ দিয়েছে। মজার বিষয় যে, কুমলাই নদী সিএস এবং এসএ রেকর্ডে নদী হিসেবে থাকলেও বর্তমান আরএস রেকর্ডে ওই জমি ব্যক্তি মালিকানা। তাই নদীটি উদ্ধারের জন্য ১০ দফা দাবি হচ্ছে, ১. নদী থেকে তালিকাভুক্ত ২৭০ জন এবং তালিকার বাইরে সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হোক। ২. সিএস রেকর্ড এবং বর্তমান প্রবাহ বিবেচনায় নিয়ে নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হোক। ৩. নদীর জমি ব্যাক্তি মালিকানা বাতিল করে রেকর্ড সংশোধন করা হোক। ৪. নদীটির উৎস-মিলনস্থল দৈর্ঘ্য প্রস্থ লিপিবদ্ধ করা হোক। ৫. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভ্রান্তি দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ৬. নদীটির পুরনো প্রবাহপথ সচল করা হোক। ৭. সেতুবিহীন আড়াআড়ি সড়কে নদীর প্রকৃত প্রস্থ অনুযায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক। ৮. নদীর প্রকৃত প্রস্থ অনুযায়ী সেতু নির্মাণ করা হোক। ৯. নদীর উপর থেকে বিদ্যালয় সরকারি উদ্যোগে সরিয়ে নেয়া হোক এবং ১০. নদী অবৈধ দখল, খাজনা-খারিজ, ক্রয়-বিক্রয়, রেকর্ডভুক্ত করার কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। রিভারাইন পিপলের নীলফামারী জেলা সমন্বয়ক আব্দুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, কুমলাই নদী সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মমিনুর রহমান কাজল, শালকি নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক আমিনুর রহমান, সদস্য সচিব জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রমুখ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ